করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ২৩ মার্চ থেকে সারাদেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, দেশের প্রায় সবধরণের উৎপাদন শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে যা পরিবেশের উপর বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে।
মানুষের সৃষ্টি করা এই মারাত্মক বর্জ্য পদার্থ যখন পরিবেশের আর ক্ষতি করেনা, তখন কি ঘটতে পারে? পৃথিবীটা সবদিক দিয়ে নির্মল হয়ে যায়।
এর যথেচ্ছ প্রমাণ IQAir এর আজকের বিশ্ব বায়ু মানের সূচকের র্যাঙ্কিং থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রতিদিনের বৈশ্বিক বায়ু মানের সূচক থেকে জানা যায় যে, ভারতের কোনো শহর এই মুহূর্তে আর প্রথম ১০ টি দূষিত শহরের তালিকায় নেই।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকেও বিশ্বের প্রথম সারির দূষিত শহরগুলোর মধ্যে তিনভাগের দুভাগ ছিল ভারতের। এবং একবছর পূর্বে প্রথম ২০ টি দূষিত শহরের মধ্যে ১৫ টিই ছিল ভারতের। রাজধানী দিল্লী ছিল তালিকার শীর্ষ নাম্বারে।
দূষিত শহরের তালিকা থেকে ভারতীয় শহরগুলোর নাটকীয়ভাবে উত্থানের নেপথ্যে অবশ্যই সব কৃতিত্ব দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা, যার জেরে সমস্ত কলকারখানা এবং ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য হলেও তা যে পরিবেশের জন্য কতটা সহায়ক হয়ে উঠেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বাতাসের গুনাবলী বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলোও মানুষের অনুপস্থিতিতে পুনর্জীবিত হয়ে উঠছে। যমুনা নদীকেও সাম্প্রতিক সময়ে পরিষ্কার হতে দেখা গেছে যা এর আগে কোনদিন দৃশ্যত হয়নি। একইভাবে, মুম্বাই শহরের উপকূলেও ডলফিনের দেখা মিলেছে যা এই দূষণজনিত জলে একটি বিরল দৃশ্য।
বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গাগুলিতে একই ধরণের প্রভাব দেখা গেলেও সেগুলো কোনোটিই ভারতীয় শহরগুলোর মত এতটা প্রভাবশালী নয়। যেসব শহরগুলিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি এবং পুনরায় কলকারখানা গুলো চালু করা হয়েছে সেগুলো স্পষ্টতই এখন প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। চীনে সম্প্রতি লকডাউন তুলে নিয়ে পুনরায় এর কলকারখানা, ফ্যাক্টরিগুলো চালু করা হচ্ছে। এবং ইতিমধ্যে প্রথম সারির ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে তাদের ৭ টি শহর জায়গা করে নিয়েছে। এই শহরগুলির মধ্যে অন্যতম হল শেনইয়াং, বেইজিং, হাংজু, গুয়ানজু এবং করোনা ভাইরাসের এপিসেন্টার হিসেবে পরিচিত উহান শহর।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল যে, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র ভাল গুনমানের AQI দেখা গেলেও অধিকাংশ শহরগুলোতে বায়ুর গুনমান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের ছিল।
লকডাউনের পূর্বে শুধুমাত্র ভারতীয় শহরগুলোর বায়ুর দূষিত পরিমাণ বিপজ্জনক পর্যায়ের ছিল। এবং যদি WAQI এর বর্তমান বায়ুর গুণমানের দিকে নজর দেয়া যায় তাহলে তা খুব বেশি উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নয়।
WAQI এর ম্যাপ অনুযায়ী এইমুহূর্তে অধিকাংশ ভারতীয় শহরের বায়ুর মান ভাল থেকে মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে। আশংকা করা যায়, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর যখন কলকারখানা গুলো পুনরায় চালু করা হবে, গাড়ি চলাচল শুরু করবে, স্থাপত্যশিল্পে কাজ শুরু হবে তখন শহরগুলোও পুনরায় দূষিত বায়ুর লিস্টে চলে আসবে।
এর অর্থ হল করোনা ভাইরাস লকডাউনের কারণে বায়ুর গুণগত মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে চলে আসলেও তা শুধুমাত্র ক্ষণিকের জন্য। ভারতীয় শহরগুলোর বর্তমান AQI মাত্রা বজায় রাখতে হলে শিল্পবাণিজ্য এবং মনুষ্য সৃষ্ট বায়ু দূষণকে অবশ্যই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
Comments ১