মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে প্রায় পুরো বিশ্ব। বাদ যায়নি উত্তর কোরিয়াও। মহামারি ভাইরাসের কারণে সীমান্ত বন্ধ করে রাখায় খাদ্য সংকটে পড়েছে দেশটি। এবার তাই খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বাড়ির পোষা কুকুরকেই সরকারের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন।
প্রাণীকূলের মধ্যে কুকুর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পোষা প্রাণী। প্রভুভক্ত এই প্রাণী তার প্রভুর পরিবারেরই সদস্য হয়ে যায়। কিন্তু সেটা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের কাছে বলার সাহস আছে কি কারোর?
নানান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে উত্তর কোরিয়া এখন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে। সেই খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কিম তার দেশের সকল কুকুরকে সরকারের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের এই পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রশমিত করার লক্ষ্য বলেই মনে করা হচ্ছে যেহেতু দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশঃ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে এবং খাদ্যের সংকট বেড়ে যাচ্ছে যা শাসক এবং জনগণ উভয়ের জন্যেই উদ্বেগজনক।
তবে ধারণা করা হচ্ছে কিম জং উন তার দেশের দরিদ্র শ্রেণীর জনগণকে খুশি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেননা দেশটির সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর জনগণ সাধারণত শুকর ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু পালন করে থাকেন। অপর দিকে কুকুরের মত পোষা প্রাণীগুলো সাধারণত রাজধানী পিয়ংইয়ং এর ধনী শ্রেণীর মানুষরাই পালন করে থাকেন।
এই পোষ্যের মালিকানাটিকে উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ পুঁজিবাদী “অবক্ষয়” এর প্রতীক হিসাবে দেখে বলেই জানা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার চোসুন ইলবো সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, একটি সূত্র জানিয়েছে যে কিম কুকুর পোষা নিষিদ্ধ করেছেন এবং জুলাই মাসে ঘরে একটি কুকুর থাকার বিষয়টি “বুর্জোয়া আদর্শের কলঙ্কিত প্রবণতা” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সুত্র জানিয়েছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ কুকুর পোষা পরিবারগুলিকে সনাক্ত করেছে এবং তাদের পোষা প্রাণিটিকে ছেড়ে দিতে বা জোর করে তাদের বাজেয়াপ্ত করে তাদের নামিয়ে দিতে বাধ্য করছে। জানা যায় এসব কুকুরের মধ্যে কিছু কুকুরকে রাষ্ট্র পরিচালিত চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয় বা কুকুরের মাংস রেস্তোঁরাগুলিতে বিক্রি করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুর খাওয়ার ঐতিহ্য ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকলেও কুকুরের মাংস দীর্ঘকাল ধরেই কোরিয়ান উপদ্বীপে একটি সুস্বাদু খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে দীর্ঘকালের ঐতিহ্য চাইলেই একদিনে হারিয়ে যায়না। জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় খামার গুলি থেকে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি কুকুর খাওয়ার জন্যে বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার আড়াই কোটি জনগণের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষই ব্যাপক খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার ফলে ফসল ফলন ব্যর্থ হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস মহামারী খাদ্য সরবরাহকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
নিজেদের সমস্যায় সবসময় পাশে পাওয়া প্রতিবেশি মিত্র দেশ চীনও একই ধরণের খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।