১৯৫৮ সালে, শ্যামলা গোপালান পুষ্টি এবং এন্ডোক্রিনোলজিতে ডক্টরেট করার জন্য তার পরিবার ও দেশ ভারত থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে এসেছিলেন।
গোপালান ছিলেন ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী। যিনি অল্প বয়সেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। তবে হাজার মাইল দূরের ক্যালিফোর্নিয়ায় যাওয়া ছিল তার জীবনের প্রথমবার নিজের দেশ ভারতের বাইরে পা দেওয়া যেখানে তিনি তার তিন ভাইবোন ও পিতা মাতা সহ বাস করতেন।
সৌভাগ্যক্রমে গোপালান এমন একটি ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করা বেছে নিয়েছিলেন যা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত সংস্কৃতির রাজধানী হয়ে উঠছিল। সেখানে, তিনি বে এরিয়ার প্রাণবন্ত কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মাঝেই একটি বাড়ি খুঁজে পান।
গোপালান তার পড়াশোনা করার সময়ই তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। তিনি এই আন্দোলনেই তার প্রথম প্রেম ডোনাল্ড হ্যারিস এর দেখা পেয়েছিলেন যিনি ছিলেন একজন জামাইকান এবং অর্থনীতির ছাত্র। পরবর্তীতে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। মায়া এবং তার বড় বোন কমলা, যাকে মঙ্গলবার ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য ডেমোক্রেটিক দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে তাঁর জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে লেখা “দ্য ট্রুথ উই হোল্ড” বইয়ে তার মেয়ে কমলা হ্যারিস লিখেন, “ভারত থেকে আসার মুহূর্ত থেকেই তিনি কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে বেছে নিয়েছিলেন এবং এই সম্প্রদায় তাকে স্বাগত জানিয়েছিল।”
“একটি দেশে যেখানে তাঁর কোনো পরিবার ছিল না, তারাই তার পরিবার হয়ে ওঠে এবং তিনি তাদের।”
বাচ্চারা ছোট থাকার সময়ই গোপালান এবং ডোনাল্ড হ্যারিস এর বিচ্ছেদ হয়, তবে গোপালান নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় থেকে যান। কমলা হ্যারিস লিখেছিলেন যে তাঁর মা অত্যন্ত সচেতন ছিলেন তিনি দুটি মেয়েকে মানুষ করছেন যাদের সাধারণ মানুষ ধরে নেবে কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতীয় কৃষ্ণাঙ্গ নয়।
২০০৯ সালে গোপালান মৃত্যুবরণ করেন। হ্যারিস তার জীবনের অন্যতম প্রভাব, রাজনীতিতে প্রবেশে অনুপ্রেরণা সহ সকল ক্ষেত্রে তার মাকেই কৃতিত্ব দেন।
তবে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে তে গিয়ে গোপালানের নাগরিক অধিকারের কর্তব্যবোধ নতুন উদ্দেশ্য পেলেও তা হয়তো ভারতেই সৃষ্টি হয়েছিল।
গোপালানের মা এবং হ্যারিসের নানী, রাজাম গোপালাম ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী সম্প্রদায়ের সংগঠক। রাজামের স্বামী পি.ভি. গোপালাম ছিলেন একজন দক্ষ ভারতীয় কূটনীতিক।
হ্যারিস তার বইতে লিখেছেন, “আমার মা এমন পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন যেখানে রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং নাগরিক নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই আসে।”
“আমার নানা-নানী উভয়ের কাছ থেকেই মা গভীর রাজনৈতিক চেতনা পেয়েছিলেন। তিনি ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, সংগ্রামের প্রতি সচেতন ছিলেন, অসমতার বিষয়ে সচেতন ছিলেন। তিনি তার আত্মায় সংকুচিত ন্যায়বিচারের বোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।”
কমলা হ্যারিসের জীবনে তার নানার অনুপ্রেরণা
ন্যায়বিচারের এই বোধটি পি.ভি. গোপালান কর্তৃকই সৃষ্ট, যিনি কূটনীতিক হিসাবে দেশ বিভাগের পরে ভারতে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) – থেকে শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করার কাজ করেছিলেন, হ্যারিসের মামা গোপালান বালচন্দ্রন জানিয়েছেন।
বালচন্দ্রন সিএনএনকে এক ফোনে বলেছিলেন যে মানবিক বিষয় নিয়ে তাঁর বাবা দৃঢ় দৃষ্টি রেখেছিলেন, যা শ্যামলের লালন-পালনে প্রভাবিত করেছিল।
৮০ বছর বয়সী বালাচন্দ্রন ছোটকালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান তিনি এবং তাঁর বোন কৌতুক খেলতে পছন্দ করতেন। তিনি স্মৃতিচারণ করেন তাঁর বাবা ছিলেন চুপচাপ কিন্তু সবসময় সাহায্যশীল।
পরিবার ছেড়ে শ্যামলাকে এতদূরের ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসতে দেওয়া মিস্টার গোপালানের নিজের সন্তানদের নিয়ে আত্মবিশ্বাস এর ফিকটি ফুটে ওঠে। তৎকালীন সময়ের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার ভারতে একজন ১৯ বছর বয়সী মেয়ের বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া মোটেই সহজ কিছু ছিল না।
কিন্তু পিভি গোপালান এবং রাজাম গোপালান ছিলেন তৎকালীন সময়েও দূরদর্শী। বালাচন্দ্রন বলেছিলেন যে তারা প্রথম বছরের জন্য অর্থ প্রদানের প্রস্তাব করেছিল এবং তার পরে শ্যামলাকে এটি নিজেই তৈরি করতে হবে, যা তিনি করেছিলেন।
কমলার লেখায় স্পষ্ট ফুটে ওঠে পিভি গোপালান তার নাতনিদেরকেও অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বালাচন্দ্রন জানান তাঁর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বলতেন, “আমি তোমাদের পরামর্শ দেবো, তবে তোমরা সেটাই করবে যা তোমাদের কাছে সেরা বলে মনে হয়, যা তোমরা পছন্দ করো এবং ঠিকভাবে করতে পারো।”
হ্যারিস গত বছর লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে তাঁর দাদাকে তার “বিশ্বের অন্যতম প্রিয় মানুষ” বলে অভিহিত করেছিলেন, যখন তিনি এখনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।