করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ নিয়ে এখনও হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে এক ভয়ঙ্কর সংকট সৃষ্টি করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ভাইরাসটির হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় ভ্যাকসিন। সে কারণেই নানান দেশের হাজার হাজার বিজ্ঞানী এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কাজে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত অন্তত ১২০ টি গবেষক দল করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, ভারতও।
সম্প্রতি বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মার বায়োটেক বিভাগ করোনার ভ্যাকসিন তৈরির ঘোষনা দেয়। নিজেদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায় তাদের ভ্যাকসিন এখন দ্বিতীয় ধাপে প্রাণিদের ওপর পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সফলতা পেয়েছে। ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য তারা আবেদন জানাবেন এবং গবেষণা চালিয়ে যাবেন।
ওদিকে সারাবিশ্বের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন। তারা জানিয়েছে আগামী অক্টোবর থেকেই তাদের ভ্যাকসিনটির বাজারজাতকরণ করা হতে পারে।
ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানীরাও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
আরো পড়ুনঃ ক্রিস্টমাসের আগে পুরো ব্রিটিশবাসীকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হবে, দাবি অক্সফোর্ড অধ্যাপাকের
জানা যায়, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকার যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন গবেষনার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এরই মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনের চুক্তিও একাধক সংস্থার সাথে হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
এই ভ্যাকসিনের সকল পরীক্ষা শেষ হবার পর তা বাজারে আসতে কত দেরি এ নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহের শেষ নেই। তবে যত জরুরিই হোক, আগামী অক্টোবরের আগে তা বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্যা ইকোনমিস্ট এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী আগস্ট মাসেই জানা যাবে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল।
এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হলে তা অক্টবরেই জরুরিভাবে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ অক্টোবরের দিকেই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে এক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
এদিকে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন বাণীজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য চুক্তি হয়েছে ভারতের কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে। এছাড়াও ব্রাজিলেও উৎপাদন হবে এই ভ্যাকসিন।
অক্সফোর্ডের সুত্রে জানা যায়, তাদের এই ভ্যাকসিনটির শেষ পর্যায়ের পরীক্ষার অংশ হিসেবে আট হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
এ গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা ডা. সারা গিলবার্ট জানিয়েছেন, প্রাথমিক ফলাফলে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সফলতা দেখিয়েছে তাদের ভ্যাকসিন।
আরো পড়ুনঃ সারাহ গিলবার্ট, যার আবিস্কৃত ভ্যাকসিনে আশাবাদী বিশ্ব
তাদের এই ভ্যাকসিন অন্তত বছরখানেক ধরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে বলে দাবি করেন তিনি।
অপর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, হাতের নাগালের মধ্যেই রাখা হবে এই ভ্যাকসিনের দাম। তাদের সাথে একমত জানিয়ে এস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে তারা প্রায় কয়েকশ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করবে এবং প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম রাখা হতে পারে এক কাপ কফির দামের সমান।