করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, গলা ব্যাথা এই উপসর্গ গুলো প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকেই তাঁর থেকে সংক্রমিত হতে শুরু করে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস! সম্প্রতি একদল গবেষক তাদের গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ এর ‘ইনকিউবেশন’ পর্ব সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণা পত্রটিতেই করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত নতুন এই তথ্যটি উঠে এসেছে।
গবেষণাপত্রটিতে নিয়োজিত থাকা গবেষকরা আশংকা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, সংক্রমণের স্বাভাবিক উপসর্গগুলো প্রকাশ না পাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না যে সে কোভিড-১৯ সংক্রমিত। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই সময় যদি আক্রান্ত ব্যক্তির র্যাপিড টেস্ট করা হয় তাহলেও তার করোনা সংক্রমণ পজিটিভ আসে না!
উক্ত গবেষণাপত্রে জানানো হয়, ৯৪ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে মোট ৪১৪ বার লালারস সংগ্রহ করা হয়। এরপর আক্রান্তদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার দিন থেকে শুরু করে ৩২ দিন পর্যন্ত তাদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, শুরুর দিকে ভাইরাসের আগ্রাসন এবং ভাইরাল লোড বা সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা সবথেকে বেশি থাকে। ২০ দিন পার হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করে এবং কোভিড-১৯ পুরোপুরি নির্মূল হয় এর সংক্রমিত হওয়ার ৩৭ দিন পর। ‘নেচার’ প্রত্রিকার ঐ প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
‘নেচার’ প্রতিকায় প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনটিতে দেওয়া তথ্যকে সমর্থন জানান ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ক্রমাগত পরিব্যক্তির মাধ্যমে এর চরিত্র বদল করে চলেছে। ইদানীং তাই র্যাপিড টেস্টেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ ধরা পড়ছে না।
মোহালির ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ -এর অধ্যাপক ড. বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৪৪ শতাংশ ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের কোনও উপসর্গই ছিল না। কোভিড-১৯ ভাইরাসের এই গা ঢাকা দিয়ে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপসর্গগুলি কতদিনে প্রকাশ পাবে তা তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। তাই অ্যান্টিবডি টেস্ট নয়, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেস্ট (RADT) -এর মাধ্যমেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়তে পারে।”
ড. বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউন যথেষ্ট নয়। এরজন্য চাই বাড়তি সতর্কতা। চাই আরও ব্যাপক র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট।
তবে ভারতের জনসংখ্যা এবং চিকিৎসা পরিকাঠামোর নিড়ীখে সকলের ঘন ঘন র্যাপিড টেস্ট করাটা যে অসম্ভব, তা মেনে নিয়েছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোর্সঃ জি২৪ ঘন্টা